সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ অপরাহ্ন

ঢাকার দাপুটে জয়

স্বদেশ ডেস্ক: ওপেনার তামিম ইকবাল-আসিফ আলির দুর্দান্ত ব্যাটিং, পাকিস্তানের পেসারওয়াহাব রিয়াজের বোলিং ও অতিরিক্ত উইকেটরক্ষক জাকের আলির রেকর্ড গড়া ম্যাচে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে রাজশাহী রয়্যালসকে ৭৪ রানে হারালো মাশরাফির ঢাকা প্লাটুন। টানা তিন ম্যাচ জয়ের পর অবশেষে হারের স্বাদ নিতে বাধ্য হলো রাজশাহী। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭৪ রান করে ঢাকা প্লাটুন। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৯০ রান যোগ করেন তামিম-আসিফ। অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান তামিম ৫২ বলে ৬৮ ও আসিফ ২৮ বলে ৫৫ রান করেন। ১৭৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ১০০ রানেই গুটিয়ে যায় রাজশাহী। উইকেটরক্ষক জাকের ৬টি ক্যাচ ও রিয়াজ ৩.৪ ওভার বোলিং করে ৮ রানে ৫ উইকেট নেন। টি-২০ ফরম্যাটে রিয়াজের এটি ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন রাজশাহী রয়্যালসের অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল। এবারও দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি ঢাকার দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়। তৃতীয় ওভারে দলীয় ২০ রানে আউট হন এনামুল। রাসেলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৯ বলে ১০ রান করেন তিনি।

এরপর ক্রিজে আসেন প্রথমবারের মত এবারের আসরে খেলতে নামা লুইস রিসি। ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ১১ বলে ৯ রানে থামেন রিসি।

আগের তিন ম্যাচে পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিন নম্বরে খেলতে নেমেছিলেন মেহেদি হাসান। প্রথম দু’ম্যাচে ৫৯ ও ৫৬ রান করলেও, আগের ম্যাচে খালি হাতে ফিরেন মেহেদি। তাই এ ম্যাচে রিসিকে উপরে সুযোগ গিয়ে মেহেদিকে চার নম্বরে ব্যাটিং-এ পাঠায় ঢাকার টিম ম্যানেজমেন্ট।

মেহেদি যখন উইকেটে যান তখন ঢাকার স্কোর ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৩৬ রান। তবে ব্যাট হাতে মারমুখী হয়ে ওঠেন মেহেদি। ২টি ছক্কা ও ১টি চারে দলের রানের গতি বাড়ান তিনি। অপরপ্রান্তে মেহেদিকে স্ট্রাইক দিতে ওয়ানডে মেজাজে ছিলেন তামিম।

কিন্তু দশম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হয়ে যান মেহেদি। ১১ বলে ২১ রান করেন এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। তার বিদায়ে উইকেটে যান তৃতীয়বারের মত এবারের আসরে খেলতে নামা আরিফুল হক। কিন্তু ৭ রানে আরিফুলকে থামান রাজশাহীর মিডিয়াম পেসার ফরহাদ রেজা। রানের গতি বাড়াতে এবার উইকেটে যান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু ফরহাদের প্রথম বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ম্যাশ। এতে ১২ দশমিক ২ ওভারে ৮৪ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ঢাকা।

এ অবস্থায় ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন পাকিস্তানের আসিফ আলি। প্রথম ৬ বল ৭ রান নেন আসিফ। ১৫তম ওভারে ফরহাদকে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। এতে ১৬ ওভার শেষে ঢাকার রান দাড়ায় ৫ উইকেটে ১১৯।

১৭তম ওভারে ফরহাদকে প্রথম তিন বলে ২টি ছক্কা ও ১টি চার হাঁকান আসিফ। আর শেষ বলে ছক্কা মেরে ঐ ওভার থেকে ২৩ রান তুলেন তামিম-আসিফ জুটি। ঐ ছক্কাতেই ৪৪ বলে এবারের আসরে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম।

রাসেলের ১৮তম ওভারে তামিমের ১টি করে ছক্কা ও চারে ১১ রান পায় ঢাকা। ১৯তম ওভারে আসিফের একটি ছক্কায় ১২ রান পায় ঢাকা। স্বদেশী ইরফানের এ ওভারেই বাউন্ডারি হাকিয়ে ২৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হয় আসিফের। কিন্তু রাসেলের শেষ ওভার থেকে ৯ রানের বেশি নিতে পারেননি তামিম-আসিফ জুটি। তারপরও ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় ঢাকা। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৯০ রান যোগ করেন তামিম-আসিফ। জুটিতে ২৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন তারা। শেষ ৪ ওভারে ৫৫ রান পায় ঢাকা।

৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। ৪টি করে চার-ছক্কায় ২৮ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করেন আসিফ। রাজশাহীর ফরহাদ ৪৪ রানে ২ উইকেট নেন।

১৭৫ রানের লক্ষ্যে প্রথম ওভারেই বিধ্বংসী রূপ নেন রাজশাহীর ওপেনার আফিফ হোসেন। মাশরাফির করা প্রথম ওভারের প্রথম ডেলিভারি থেকে ৩ রান নিয়ে আফিফকে স্ট্রাইক দেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। পরের তিন বলে আফিফ-৬,৪,৪ রান নেন। ফলে প্রথম ওভার থেকেই রাজশাহী ১৮ রান পায়।

পরের দু’ওভারে যথাক্রমে ৯ ও ১২ রান তুলেন আফিফ-লিটন। ফলে ৩ ওভারে ৩৯ রান পেয়ে যায় রাজশাহী। চতুর্থ ওভারে পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজকে আক্রমনে আনেন মাশরাফি। আক্রমনে এসেই প্রথম বলে লিটনকে, তৃতীয় বলে অলক কাপালিকে ও শেষ বলে পাকিস্তানের শোয়েব মালিকসহ তিন উইকেট শিকার করেন রিয়াজ। লিটন ৬ বলে ১০, কাপালি-মালিক শূন্য রান করে ফিরেন।

রিয়াজের এমন ভয়ানক আঘাতের পর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে রাজশাহীর পরের দিকে ব্যাটসম্যানদের। তাই পরের দিকে আর কোন ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ঢাকার পেসার রিয়াজের ৮ রানে ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে উইকেটরক্ষক জাকের আলীর রেকর্ড ৬টি ডিসমিসালে মুখ থুবড়ে পড়ে রাজশাহীর। ১৬ দশমিক ৪ ওভারে ১০০ রানে গুটিয়ে যায় রাজশাহী। আফিফ ২৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন।

এই জয়ে ৮ খেলায় ৫জয় ও ৩হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের পথে বেশ ভালোভাবেই থাকলো ঢাকা। ম্যাচ হারলেও প্লে-অফের দৌড়ে আছে রাজশাহী। ৭ খেলায় ৫ জয় ও ২ হারে ১০ পয়েন্ট রাজশাহীর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ঢাকা প্লাটুন : ১৭৪/৫, ২০ ওভার (তামিম ৬৮*, আসিফ ৫৫*, ফরহাদ ২/৪৪)।
রাজশাহী রয়্যালস : ১০০/১০, ১৬.৪ ওভার (আফিফ ৩১, নাহিদুল ১৪, রিয়াজ ৫/৮)।
ফল : ঢাকা প্লাটুন ৭৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ওয়াহাব রিয়াজ (ঢাকা প্লাটুন)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877